![]() |
ভালোবাসার পরশে - Bangla Islamic Love Story - Love Status |
মধ্য রাত হলো হঠাৎ গায়ের উপর থেকে কম্বলাটা সরে গেছে তারমধ্যে শীতকাল বোঝেনইতো কেমন লাগে। তারপর চোখে ঠান্ডা পানির পরশ অনুভব করলাম। ঘুম ভেঙে গেল চোখ খুলতেই দেখি পানির গ্লাস হাতে ঠাঁয় দাড়িয়ে চোখ বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে আমাতুল্লাহ।
প্রতিদিন এভাবেই আমি আগে ঘুম থেকে উঠলে আমাতুল্লাহর চোখে পানি ছিটিয়ে দিয়ে ঘুম থেকে জাগিয়ে দেই। আর ও আগে উঠলে তার বিপরীত।
আমি একটু অলসতা নিয়ে বিছানা চেডে উঠে ওয়াসরুমে গিয়ে গরম ও ঠান্ডা পানির নল চেডে দিয়ে ওযু করে আসলাম। আমাতুল্লাহ আমার আগেই ওযু করে আমাকে জাগিয়ে দিল। এবার দুজনে জায়নামাজ বিছিয়ে তাহাজ্জুদ সালাতে দাড়িয়ে গেলাম।
নামাজ শেষ করে আমি আমাতুল্লাহর হাতটা আমার হাতে নিতেই ও আশ্চর্য হয়ে বলল 'আরে কি করছ?' আমি চুপচাপ ওর হাতে তাসবিহ পড়তে লাগলাম।
একটু পর ফজরের আজান দিল। সুন্নাত নামায গুলো ঘরে পড়া উত্তম। সুন্নাত নামাযটা ঘরে আদায় করে মসজিদের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হলাম...
বাহিরের নিস্তব্ধ রজনিতে মিষ্টিমাখা চাঁদের আলো ও মৃদ মৃদ বাতাস যেন অন্তরটা প্রশান্ত করে দিল। আচ্ছা ফজরের সময়ের বাতাস এমন হয় কেন?
নামাজ শেষ করে বাসায় এসে কলিং বেল এ চাপ দিলাম।
"ক্লিং ক্লিং"
আমাতুল্লাহ ভিতর থেকে দরজা খুলে সালাম দিয়ে বলল,
~আসছ! আমার মহারাজা
~হুম পাগলি এসেছি, এক গ্লাস পানি হবে কি?
~জ্বি হবে আমার মহারাজা (একটু মিষ্টি ভাষায় বলল আমাতুল্লাহ)
আমি গিয়ে চোপায় বসলাম। মোবাইলটা বের করলাম কুরআন তিলাওয়াত করার জন্য।
কিছুক্ষণ পরে...
এই নিন মহারাজা পানিটুকু পান করে গলাটা শীতল করে নিন। (একটু মুচকি হাসি দিয়ে বলল আমাতুল্লাহ।) প্রিয়তমার এই হাসিটি আমার অশান্ত মনকে শান্ত করে।
আমাতুল্লাহ পানি দিয়ে ভিতরে চলে গেল।
আমি তিলাওয়াত করা শুরু করলাম সূরা হুজুরাত(এই সূরাকে সামাজিক রীতিনীতির সূরা বলা হয়)।
হঠাৎ করে শরীরের শিরা-উপশিরা ছেদ করে হৃদয়ে প্রবেশ করল মনমুগ্ধকর এক সুর। অবশ্য এমনটা প্রতিদিনই হয়। তবুও আজ যেন অন্য রকমই লাগলো।
ওহ্ সরি বলতেই ভুলে গেছি যে, আমাতুল্লাহ একজন হাফেজা। মাশাল্লাহ, ওর কন্ঠে তিলাওয়াত শুনলে আমি মুগ্ধ হয়ে যাই।
ফজরের পর কুরআন তিলাওয়াত আর যিকির আজকার করে সময় পার করে দেই দুজনে।রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ফজরের পরে ঘুমাতে বারন করেছেন।
কিছু সময় কাটানোর পর আমাতুল্লাহ রান্নাঘরে গেল সকালের নাশতা বানাতে। আমিও আমার পাগলিটাকে একটুখানি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলাম।
তবে যখনই আমি আমাতুল্লাহকে সাহায্য করতে যাই তখন আমাতুল্লাহ আমার উপর রেগে যায়। "বলে, তোমাকে বলছি আমি এইখানে আসতে হুহ্? আমি করতেছি না?
আমাতুল্লাহ বলে, সাংসারিক সমস্ত কাজ ও নিজেই করবে। তবুও আমি কখনো কখনো ওকে সাহায্য করি। (" স্বামী স্ত্রীর কাজে সাহায্য করবে স্ত্রী স্বামীর কাজে সাহায্য করবে। এতে ভালবাসা মিশে থাকে মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ এর মতো ")
বকাও শুনতে হয় অনেক সময়।
নাস্তায় বেশি কিছু না শুধু আটারুটি আর ডাল দিয়ে দুজনের নাস্তা আরম্ভ করলাম।
রুটি মুখে নিতেই আমাতুল্লাহ বলে উঠল,
~এই! চল না আজ একটু বাহির থেকে ঘুরে আসি সাথে ঘরের জন্য কিছু কেনা-কাটার প্রয়োজন ছিল সেগুলোও সেরে ফেললাম। কি বলেন মহারাজা?
~হুম আইডিয়া তেমন খারাপ না। এমনিতেই অনেকদিন তোমাকে নিয়ে কোথাও ঘুরতে যাওয়া হয় নি। আজ তাহলে যেতেই পারি পাগলি আমার। খুশি তো? (আমি ওর গাল টেনে দিয়ে বললাম।)
~আরে আরে কি করছ! ব্যাথা লাগছে তো। হ্যাঁ অ......নেক খুশি।
~আচ্ছা তাহলে তুমি তৈরি হয়ে নাও।
~আমি বাকি কাজ শেষ করে তৈরি হচ্ছি তাহলে কেমন! আমার ল্যাভিং হাজবেন্ড "আই লাভ ইউ" (আমাতুল্লাহ আমার গাল টেনে বলল)
~"আই লাভ ইউ টু পাগলি"
সকাল দশ-টা ছুঁইছুঁই আমি রেডি হয়ে আমাতুল্লাহকে ডাক দিলাম।
~কই, হলো?
~এইতো আর একটু হয়ে গেছে।
আমাতুল্লাহ কালো বোরখা,নিকাব,হাত-পায়ে মুজা পরে আছে শুধু চোখ দুটো দেখা যাচ্ছে। আমাতুল্লাহকে যখনই আমি এইভাবে দেখি তখন আমার মন চায় অপলক দৃষ্টিতে শুধু ওর কাজল কালো চোখের দিকে তাকিয়ে থাকি। আর আমি তা-ই করলাম। হঠাৎ!
~কই চল! কি দেখছ হা করে?
~না কিছু না তোমাকে দেখছিলাম।
~আমাকে তো সব সময়ই দেখ। আজ আবার নতুন কী?
~ওরে আমার পর্দাওয়ালি বউ। তোমাকে যে যত দেখি ততই আরও দেখতে মন চায়।
~এখন চল। বাসায় ফিরে এসে মন ভোরে দেখো।
শপিংয়ের উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হলাম। দু'জনে সিড়ি দিয়ে নিচে নামার সময়। আমি আমাতুল্লাহকে বললাম জানো! নিচে নামার সময় "সুবহানাল্লাহ" বলতে হয় আর উপরে উঠার সময় "আল্লাহু আকবার"
~আসলেই? তাহলে তো আজকে থেকে অভ্যাস করবো ইনশাআল্লাহ।
উঠানে ছোট বাচ্চারা ক্রিকেট খেলছিল। এই সময় আমাতুল্লাহ আমাকে আলতো করে একটা চিমটি দিয়ে বলল।
~এই চল না তুমি আর আমি একটু ক্রিকেট খেলি।
~কিহ! এখন? শপিংয়ের জন্য লেট হয়ে যাবে যে। এখন না। আমরা কালকে খেলি?
~আরে লেট হবে না জাস্ট একটু খেলব।
আমাতুল্লাহ আমাকে জোর করতে লাগলো। কি আর করার ওর কথা যে পেলতে পারি না। আশেপাশে বড় কেউ নেই শুধু বাচ্চারা তাই আমি রাজি হলাম।
~আচ্চা পাগলি! খেলব কিন্তু শুধু দুই বল, একটা তুমি একটা আমি। ঠিক আছে?
~আচ্চা ঠিক আছে, ঠিক আছে। চল এবার শুরু কর।
বাচ্চাদের কাছে আবদার করতেই ব্যাট বল আমাদের দিল। বাচ্ছারাও একমত আমাদের সাথে খেলবে। আমি পাগলি টাকে ব্যাট দিয়ে বললাম।
~নাও আগে তুমি ব্যাটিং কর, আমি বলিং।
~আচ্ছা ঠিক আছে দাও।
শুধু দুই বল দুজনের হাতে। দেখি কে কি করতে পারে। বাচ্চারা উৎসাহ দিতে লাগলো। আমি বল করলাম, বল আমাতুল্লার কাছে যেতেই সে এমন ভাবে ব্যাটিং করল সবাই হা করে বলের দিকে তাকিয়ে আছে এক নজরে। আমি অবাক হলাম মনে মনে ভাবতেছি। "আমার পাগলিটা এত ভালো খেলতে পারে ভাবিনি কখনো"
যাকগে এবার আমার পালা। পরে জিজ্ঞাস করব। এবার আমি ব্যাট নিলাম আর ও বল নিল।
আগেই বলে রাখি আমি ক্রিকেট খেলতে পারি না। সেই কবে ছোট বেলায় খেলেছিলাম।
~আমি কিন্তু খেলতে পারি না। যদি ভুল করে তোমার গায়ে বল লেগে যায়। তাহলে যে আমার স্বচ্চ কাঁছের টুকরাটা ভেঙে যাবে। আমি তখন কি করবো? তোমার গায়ে একটু আছঁড় লাগলে আমার যে সহ্য হবে না।
(আমি আমাতুল্লাহকে ফিসফিস করে বললাম।)
আমাতুল্লাহ একটু রেগে কোমরে হাত দিয়ে রাগ মাখা মুখে বলল। আর ওর রাগান্বিত চোখ দুটি দেখলেই আমার বুকের বিতর "দুক বুক, দুক বুক " বেড়ে যায়।
~হুহ্ হইছে হইছে! ভাঙলে দেখা যাবে। যাও এখন খেল।
আমাতুল্লাহ নিজে নিজে ফিসফিস করে বলতে লাগলো "ছেলে মানুষ হয়ে খেলতে পারে না" আমাতুল্লার একটু হাসি পেল। হাসিটা চেপে দরে বল চুডে মারলো আমার দিকে। আর আমার কথা কি আর বলবো। খেলতে তো পারি না শুধু শুধু বাচ্চাদের সামনে লজ্জা পেলাম আর কি। প্রথম বলেই আউট হয়ে গেলাম।
আমাতুল্লাহ ফিক করে হেসে দিল সাথে বাচ্চারাও। বাচ্চাদের সামনে লজ্জা পেয়ে আমাতুল্লাহকে নিয়ে বাচ্চাদের থেকে বিদায় নিয়ে গন্তব্যের দিকে রওনা হলাম।
যেতে যেতে পথে আমাতুল্লাহ আবার আমার কমোরে আলতো করে চিমটি কেটে দিয়ে হাসতে হাসতে বলল।
~আমার মহারাজাকে কেন বাচ্চাদের সামনে লজ্জা পেতে হলো? শুনি।
~আরে বুঝ না তুমি? আমার রানিকে কি আমি হারতে দিতে পারি বল? তুমিই ত আমার রাজপ্রাসাদের রানি আর রানি হেরে যাবে এটা কি মানায়? বল?
~হে হে হইছে! আসছেন আমার রাজপ্রাসাদের রাজা। আমার বুঝা হইছে আমার রাজা কেমন।
~আরে বুঝনা....? মজা করলাম আর কি হি হি হি। তুমিতো জানই আমি খেলতে পারি না।
~হুম অনেক মজা হইছে, এবার একটা গাড়ি নিবেন নাকি শুধু হাঁটতেই থাকব? পা ব্যাথা হয়ে যাচ্ছে।
~কি বল! কোলে তুলে নিয়ে যাব?
~এ ধুর চল'তো আসছে! গাড়ি নাও তারাতাড়ি।
~আচ্ছা গাড়ি নিব তবে, একটা সর্ত আছে৷
~কী সর্ত শুনি?
~তাহলে বল তুমি আমাকে কতটা ভালোবাস?
~বলবো না...
~তাহলে হেঁটেই যেতে হবে কিন্তু।
~তোমার সাথে হাঁটটে আমার খুউউউউউব ভাল্লাগে।
~তবে তো....পাজি।
এইভাবে দুজন শপিংয়ের উদ্দেশ্যে গাড়িতে করে চলে গেলাম। আর চলতে থাকে আমাদের ভালোবাসার মুহর্তগুলি।
আর এভাবেই যেন সকল পবিত্র ভালোবাসার বন্দন গুল অটুট থাকে এই কামনা করি। আল্লাহ আমাদের সম্পর্কেগুলোতে বরকত দান করুন আর আমাদেরকে সহি এবং হালাল পথে চলার তাওফিক দান করুন।
এবার আপনাদের জন্য কিছু কথা!
আমরা যদি হালার সম্পর্কের ফজিলতগুলো জানতাম বা হালাল সম্পর্ক যে কতটা দামি আর সুখময় তা যদি বুঝতাম তাহলে আমরা কখনোই হারাম সম্পর্কে (অবৈদ প্রেম ভালবাসা/ হারাম রিলেশনশিপ/জাস্ট ফ্রেন্ড/বেস্টু ইত্যাদি যা আমাদেরকে আল্লাহর ইবাদত করা থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।) গিয়ে নিজের ইমান ও আমলগুলো দংশ করতাম না।
আমরা অনেকে হারাম জানার সর্তেও হারাম সম্পর্কের ইতি টানতে পারি না। আজ আমাদের মন থেকে আল্লাহর ভয়টা চলে গেছে। তাই আমারা হালাল হারাম যাচাই করার প্রয়োজন বোধ করি না।
আল্লাহ আমাদের জন্য অপেক্ষা করে আছেন কখন আমরা তাঁর কাছে ফিরে আসবো। আরমা শুধু ক্ষমা চাইতে দেরি হয় আমার মহামহিম রব্ব আমাদের মাপ করতে দেরি করেন না। শুধু প্রয়োজন অনুতপ্ত মনে দুহাত তুলে অশ্রুসিক্ত হয়ে রব্বে কারিমের কাছে আকুল ফরিয়াদ করা।
আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক বুঝ দান করুক।
বিঃদ্রঃ আমি হারাম সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে এসে হালাল সম্পর্ক গড়ার প্রতি অনুপ্রাণিত করছি। তবে যারা বিয়ের জন্য সক্ষম নন, সামর্থ নেই বা পরিবার মানবে না। তারা রোজা রাখতে পারেন আর খালেস মনে আল্লাহর কাছে পার্থনা করে যান।
ভালোবাসার পরশে
লেখক: মাসুদ হোসেন
১ম: মিম্বার Minbar
Post a Comment
কমেন্টে স্প্যাম লিংক দেওয়া থেকে বিরত থাকুন