![]() |
ভালোবাসার গল্প - পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেমকাহিনী - valobashar golpo in Bengali |
অনার্স ৪র্থ বর্ষে পড়ছি অথচ এখনও কোনো প্রেয়সী কপালে জুটলো না! এদিকে বন্ধুরা একের পর এক জামা পাল্টানোর মত করে গার্লফ্রেন্ড পাল্টানো শুরু করেছে।
প্রেয়সী পাওয়ার জন্য ফেসবুকে "দর্পণের প্রতিবিম্ব" ছদ্মনাম দিয়ে টুকটাক লেখালেখি শুরু করি। এতে করে অনেক ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট আসে। মেয়েদেরও আসে কিন্তু কাউকে তেমন ভাল লাগে না। আর যাও বা একটু ভাল লাগে তাও দেখা যায় একই জেলায় থাকে না। আবার চ্যাটে নক করলে তেমন উত্তরও পাওয়া যায় না। তবুও লেখালেখি চালিয়ে গেলাম। কিন্তু কচ্ছপ গতিতে চলতে থাকে আমার ভার্চুয়াল লাইফ।
প্রোফাইলে নিজের কোনো ছবিও রাখি নি। চাচ্ছিলাম কেউ যেন আমাকে চিনতে না পারে। লেখার সুবাদে ভার্চুয়াল জগতের অনেক নামীদামী লেখকের সন্ধান পাই। তাদের দ্বারা আরও অনেক পেজ এবং গ্রুপের সাথে যুক্ত হয়। শুরু করলাম সেখানেও লেখা দেয়া। অনেক রিকুয়েস্ট আসে, কিন্তু মনের মত একটাও পাই না। নিজের উপর অকারণে রাগ উঠে। তার ওপর পাবলিক বলতে লাগলো, আমি রিকুয়েস্ট পাওয়ার জন্যই নাকি লেখালেখি করি। কেমন লাগে যখন এসব শুনি। তাই ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠানোর অপশনটায় প্রাইভেসি সেট করে দিই। শুধুমাত্র ম্যাসেজ আর ফলো অপশন চালু করে রাখি। শুরু করি বাস্তবতা নিয়ে লেখা।
একদিন "আয়নার দর্পণ" নামের এক আইডি থেকে ম্যাসেজ আসে। সেখানে লেখা ছিল, "আমি আপনার ফ্রেন্ডলিস্টের ছোট্ট একটু জায়গা পেতে পারি"? আইডির নামটা দেখে খুবই অবাক হয়! কারণ আমার আইডির নিক নেম ছিল "আয়নার দর্পণ"। সাথে সাথে আইডিটা নিয়ে গবেষণা শুরু করি। গবেষণা শেষে বুঝলাম, আইডির মালিক একজন মেয়ে। আমি রিকুয়েস্ট পাঠাই তাকে। ঘন্টাখানেক পর সে একসেপ্ট করে। সেদিন তার সাথে আর কোনো মেসেজিং হয় নি।
তার একটা অভ্যাস ছিল যে আমার কোনো পোস্টে লাইক দিত না, কিন্তু প্রতিটা পোস্টে দাঁতভাঙা সব কমেন্ট করতো। আমি তার কমেন্টের কি উত্তর দেব বুঝতে পারতাম না, তাই কোনো উত্তর দিতাম না। কিন্তু আমি তার সকল পোস্টে লাইক কমেন্ট করতাম, আর সেখানেও তার দাঁতভাঙা জবাব পেতাম। সে নিজেকে
কি মনে করতো সেই ভাল জানে! তার এসব কীর্তি আমার রাগ উঠার জন্য যথেষ্ট ছিল। একদিন সাহস করে নক করি,,
- আচ্ছা আপনি আমার সব পোস্টে এমন দাঁতভাঙা কমেন্ট করেন কেন?
- এটা আমার ইচ্ছা।
- ওকে, সরি।
- আমি আপনাকে সরি বলতে বলেছি?
- না।
- তো বললেন কেন?
- আমার ইচ্ছা। ভাল থাকবেন!
এই বলে চ্যাট অফ করে দেই। মেয়েটার এমন ভাব আমার পছন্দ হত না। সপ্তাহখানেক ওর কোনো পোস্টে আর লাইক কমেন্ট করি নি। অতঃপর একদিন সেই নক করলো,
- কেমন আছেন?
- আলহামদুলিল্লাহ, আপনি?
- জ্বি আমিও।
- ভাল।
- হুম।
কিছুক্ষণ নিরবতা। সে জিজ্ঞেস করে,,
- আপনি কি আমার উপর রাগ করেছেন?
- রাগ করবো কেন?
- করতেই পারেন! আপনাকে কমেন্ট করে বিরক্ত করি বলে।
- ঠিক বলেছেন!
- I'm sorry.
- কেন?
-bcz I disturb u.
- it’s ok.
- আমি কি আপনার নতুন ফ্রেন্ড হতে পারি?
- নতুন ফ্রেন্ড মানে?
- মানে আপনার হাজারও ফ্রেন্ডদের মাঝে কি ফ্রেন্ড হতে পারি?
- তা তো আপনি আছেন।
- Really?
- হুম।
-Thank you so much. আপনার লেখাগুলো জোস।
- আপনারও, মূলত আমি আপনার লেখার একজন ভক্ত।
- আমার লেখার ভক্ত আপনি? আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না!
- সত্যি বলছি।
- ধন্যবাদ। আচ্ছা আপনার নাম কি?
- আমি দর্পণ। আপনি?
- আমি আয়না।
- এটা কি আপনার রিয়েল নেম?
- Yes, But why r u asking?
- না মানে আমার আইডির নিক নেম আয়নার দর্পণ, তাই বললাম।
- না আয়না নামটা আব্বু রেখেছে।
- সুন্দর নাম।
- আচ্ছা আপনি এখন আমার ফ্রেন্ড, তো ফ্রেন্ডকে আপনি করে বলা ভাল দেখায় না। I hope u understand.
- ঠিক আছে, তুমি।
- হুম, পরিচয় হয়ে ভাল লাগলো।
- আমারও।
- আজ আসি তাহলে। আল্লাহ হাফেজ।
- Bye bye...
প্রথমদিনের চ্যাটিংয়ে আয়নাকে অতিরিক্ত স্টাইলিশ বলে মনে হচ্ছিল। কথায় কথায় ইংরেজি বলে। তবুও মনে মনে ওর নাম ভীষণ পছন্দ হয়েছে। ভারী সুন্দর নাম, একেবারে আমার মনের মত। এরপর দুই তিনদিন চ্যাট করি নি, কারণ সামনে পরীক্ষা। আমি ছাত্র হিসাবে খুব ভাল না আবার খারাপও না। পরীক্ষার মাত্র দুইদিন বাকি আছে। ফেসবুকে লগইন করে দেখি আয়নার পাঁচটা মেসেজ। মেসেজ গুলো ছিল,,
- hi! how r u?
- hey! where are u?
- কি হল? উত্তর দিচ্ছো না কেন?
- দেখ, আমি রেগে যাচ্ছি কিন্তু!
- Are you alright?
বুঝতে পারছি না আয়না এতো মেসেজ দিল কেন। আমি সাথে সাথে রিপ্লে দিয়ে দিলাম, "সরি আমি একটু ব্যস্ত আছি। আর দুইদিন পর পরীক্ষা শুরু তাই ফেসবুকে আসতে পারি নি"। দশ মিনিট পর রিপ্লে আসলো।
- ওহ আচ্ছা, আমি ভাবলাম তোমার অসুখ-বিসুখ হল কিনা।
- না ওমন কিছু না। এতবার মেসেজ করেছিলে কেন?
- সময় কাটছিল না।
- সময় কাটছিল না? ফেসবুকে মেয়েদের সময় কাটে না, এটা তো অস্বাভাবিক কথা!
- কেন?
- আরে তোমাদের ইনবক্সে অলওয়েজ দশ বারোটা মেসেজ আসে, সেখানে তোমার সময়ই কাটে না!
- কাঙ্ক্ষিত কারো মেসেজ না পেলে সময় কাটবে কিভাবে?
- কি! তার মানে আমি সেই কাঙ্ক্ষিত মানুষদের লিস্টে আছি?
- তোমার কি মনে হয়?
- কিছু না, বাদ দাও। কেমন আছো?
- এইতো আছি, তুমি?
- আলহামদুলিল্লাহ ভাল।
সেদিন আর পড়া হল না। এভাবে যদি চলতে থাকে তবে পড়ালেখা লাটে উঠবে। তাই সিদ্ধান্ত নিয় আইডি বন্ধ করার। আমি অতটা মেধাবী ছাত্র না যে, অল্প পড়লে বুঝতে পারবো আর আমার অনূর্বর মস্তিষ্কে ফসল দিবে।
গার্লফ্রেন্ড রাগ করলে যেমন অনর্গল কথা বলে রাগ ভাঙ্গাতে হয়, তেমনি আমিও বইয়ের পড়াগুলো সেভাবে পড়ছিলাম। মাঝে মাঝে ইচ্ছা হয় ফেসবুকে লগ ইন করি। কিন্তু নেশা হয়ে যাবে আর আমার গ্রেডও লাটে
উঠে যাবে, এই ভয়ে ইচ্ছেকে ধামাচাপা দিয়। এভাবে অনেক কষ্টে পরীক্ষা শেষ করি।
সবাই শেষ পরীক্ষা দিয়ে মাঠে বসে আড্ডা দিচ্ছে আর আমি হল থেকে বের হয়ে রুমে গিয়ে তাড়াতাড়ি ফেসবুকে লগ ইন করি। চ্যাট বক্সে আয়নার আইডির পাশে সবুজ বাতি জ্বলছে। নক করি কিন্তু সে রিপ্লে দিচ্ছে না। দশ-বারোটা মেসেজের পর আগুন ঝরা
রিপ্লে পেলাম। "কেন ফেসবুকে আসো নি? কোথায় ছিলে? আরও কত কি"? তাকে সব বুঝিয়ে বলাতে মাথা ঠাণ্ডা হল।
অতঃপর আবার চ্যাট শুরু। সেই বিকেল থেকে চ্যাট শুরু আর এখন রাত, অনেক সময় ধরে মেসেজিং করার ফলে খুব ক্লান্ত লাগছে। আয়নার সাথে কথা বলার চক্করে আমি খাওয়ার কথা ভুলে গিয়েছি। ওকে বিদায় দিয়ে অফলাইন হলাম। তখন মনে পড়ে; সে কোথায় থাকে, কি করে এগুলো কিছুই জিজ্ঞেস করি নি। নাহ থাক, পরে জানা যাবে। একদিনে এতকিছু জানতে হয় না। সেদিন রাতটা না খেয়েই পার করে দিলাম। পরের দিন আয়না আমাকে নক করে। কথা বলতে বলতে আবারও ভুলে গেলাম তার সম্পর্কে জানতে। চ্যাট অফ করবো আর ঠিক সে সময় আয়না আবারও ফেসবুকে আসলো। তাকে আবারও নক করলাম,
- একটা কথা জানার আছে?
- হুম বল
- আচ্ছা তুমি কোথায় থাকো?
- ঢাকায়
- ঢাকার কোথায়?
- বসুন্ধরায়।
- ওহ
- তুমি কোথায় পড়?
- ঢাবি।
- আমিও পড়ি।
- বল কি, আগে বল নাই যে?
- তুমিই তো জিজ্ঞেস কর নি।
- ওহ হ্যাঁ তাইতো, ভুল হয়ে গেছে।
- কোন ইয়ার? কোন ডিপার্টমেন্ট?
- একাউন্টটিং শেষ বর্ষ। তুমি?
- ইংরেজি দ্বিতীয় বর্ষ।
- খুব ভাল।
- হুম আজ আসি, খুব মাথা ব্যাথা করছে।
- আচ্ছা আল্লাহ হাফেজ, ভাল থেকো।
আজ বুঝতে পারলাম আয়না কথায় কথায় এত ইংলিশ ঝাড়ে কেন। প্রতিদিনই লম্বা একটা সময় আমাদের মাঝে চ্যাটিং চলতো। খুব ভাল একটা ফ্রেন্ডশিপ হয়। তবুও ওর নাম্বার বা ছবি কোনটাই চাই নি। আমি চাই না এই দুটো জিনিসের জন্য ফ্রেন্ডশিপে কোনো প্রকার আঘাত লাগুক।
এর মাঝে রেজাল্ট বের হয়। আল্লাহর রহমতে ফার্স্ট ক্লাস পায়। রেজাল্টের খবর শুনে আয়না ভীষণ খুশি। ধীরে ধীরে চ্যাটিং এর পরিমাণ বাড়তে থাকে। একটা পর্যায়ে সে তার সকল পোস্টে আমাকে ট্যাগ দেয়া শুরু করে। ওর দেখাদেখি আমিও আমার প্রতিটা পোস্টে ট্যাগ দেয়া শুরু করি। পোস্ট গুলোতে ওর বন্ধু-বান্ধব অনেক রসায়ন ভরা কমেন্ট করে। কিন্তু আমরা সে সবকে পাত্তা দিতাম না। ফ্রেন্ডশিপকে ফ্রেন্ডশিপের মতই যত্ন করে রাখতাম। আমরা একই ভার্সিটিতে
পড়ি তবুও একে অপরকে দেখা করার কথা বলি নি। কেন বলি নি তাও দুজনের অজানা। দুজন দুজনের সম্পর্কে অনেক কথা শেয়ার করতাম।
আমি মাস্টার্সে ভর্তি হয়। জীবন এখন আমার খুব ভাল লাগে। আয়না, আমি আর আমাদের বন্ধুত্ব নিয়ে খুব ভাল আছি। ক্লাস, প্রাইভেট, পরীক্ষার পাশাপাশি আমাদের ফেসবুকিং চলছে। কিন্তু আজও আয়না বা আমি নাম্বার বা ছবি চাই নি।
দেখতে দেখতে আমাদের বন্ধুত্বের একবছর পূরণ হল। ফেসবুকে ঢুকেই দেখি আয়নার ম্যাসেজ। "Happy Friendship Anniversary". আয়নার ম্যাসেজ পেয়ে ঠোটের কোণায় আপনা-আপনি হাসি চলে আসে। আমিও তাকে রিপ্লে করলাম। তারপর আয়না বললো,,
- কেমন আছো?
- ভাল ছিলাম না, তবে তোমার ম্যাসেজ পেয়ে ভাল হয়ে গেলাম।
- হিহিহি... ফ্লার্টিং?
- আরে না।
- তোমার মুড এখন আরও ভাল হয়ে যাবে।
- আচ্ছা? কিভাবে?
- নোটিফিকেশন চেক করো।
আয়নার সাথে চ্যাটিং করতে গিয়ে নোটিফিকেশন চেক করতে ভুলেই গিয়েছি। নোটিফিকেশনটা ছিল,
"আয়নার দর্পণ said she was with you: feeling
special." সাথে একটা কবিতা।
❝আমি তো মেয়ে মানুষ
তাই বলতে লজ্জ্বা লাগে,
কিন্তু তুই তো ছেলে
চাইলেই তুই পারতিস।
ফেসবুকেতে নামের পাশে
নীলবাতি যবে জ্বলতো,
না হয় একটু নক করতিস
চাইলেই তুই পারতিস।
পরিচয় যখন হয়েই গেলো
হতো জমপেশ আড্ডা,
তোর বাসা নাকি আমার পাশেই
ছিলো পুরাতন বাড্ডা,
চাইলেই তুই ঠিকানা নিয়ে
দেখা করতে পারতিস।
চাইলেই তুই পারতিস,
আমার নামে নীলবাতি দেখে
মিটমিট করে হাসতিস,
আমার সাথে চ্যাট করতে নাকি
বড্ড ভালবাসতিস,
সেটা আমায় বলতে পারতিস
চাইলেই তুই পারতিস।
তারপর নাকি হঠাৎ হঠাৎ
আমায় নিয়ে ভাবতিস,
কল্পনাতে নদীর ধারে
আমায় সাথেই হাঁটতিস,
একটু আমাকে ডাকতিস
চাইলেই তুই পারতিস।
ভাবনা নদীতে ডুব দিয়ে নাকি
আমায় নিয়েই ভাবতিস,
মনে মনে নাকি এই আমাকে তুই
একান্ত তোর করতিস,
চাইলেই তুই পারতিস
চাইলেই তুই পারতিস।❞
এই ছিলো আয়নার কবিতা যেটায় আমাকে সে ট্যাগ করেছে। অনেক সুন্দর কবিতা লিখতে পারে আয়না। আমি বুঝতে পেরেছি কেন ও আমাকে এই কবিতায় ট্যাগ করে লিখেছে, "ফিলিং স্পেশাল"। আমার বলতে ইচ্ছে করছে খুব, জানো তো আয়না আমার মধ্যেও এই
স্পেশাল ফিলিংসটা হচ্ছে। কিন্তু তারপরও যে, আমি চাইতে পারি না।
- কবিতা খুব সুন্দর।
- হিহিহি.... আর পাম দিতে হবে না।
- আরে না সত্যি বলছি। আমি তো কবিতা লিখতেই পারি না।
এভাবে ছোটখাটো খুনসুটিতে কেটে যাচ্ছে আমাদের দিন। আমি আস্তে আস্তে কেমন যেন আয়নার প্রতি দুর্বল হয়ে পরছি। অর্থাৎ বন্ধুত্ব এখন ভালবাসার দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে। শুধু অনুমিত নেওয়ার দরকার।
এখন ভালভাবেই দিন কাটাচ্ছি। কিন্তু দিন যতই সামনে যাচ্ছে আমার ভালবাসাও বাধ ভাঙার চেষ্টা করছে। কিভাবে আয়নাকে বলি মনের কথা বুঝতে পারছি না। এভাবে মাসের পর মাস কেটে যায় তবুও আয়নাকে
ভালবাসার কথা বলতে পারছি না। ভয় লাগে আবার বলতেও ইচ্ছা করে। মাসগুলো যেতে যেতে বছর হয়ে যায় আর এরই সাথে পাল্লা দিয়ে বন্ধুত্বও বেড়ে যায়। নিজেকে লুকিয়ে রাখতে গিয়ে ফ্রেন্ডদের কাছে বারবার ধরা পড়ে যাচ্ছিলাম, তবুও কিভাবে যেন বেঁচে যায়। এদিকে মাস্টার্সের শেষ বছরে এসে পরছি, এখনও আয়নাকে ভালবাসি বলি নি। একদিন সাহস করে চ্যাটে নক করলাম,,
- কেমন আছো?
- আছি আর কি, তুমি?
- ভাল না।
- কেন?
- অনেকদিন হলো ভাল না লাগার কারণটা লুকিয়ে রেখেছিলাম। কিন্তু আর লুকাতে পারছি না।
- আমাকে বলো তো কি হয়েছে।
খুব কষ্টে ভালবাসার কথা লিখে আল্লাহর নাম নিয়ে পাঠিয়ে দিলাম। দুই মিনিট যায়, পাঁচ মিনিট যায়, দশ
মিনিট যায় তবুও সীন হয় না রিপ্লেও আসে না। ভিতরে থেকে অস্থিরতা বেড়েই চলেছে। তেরো মিনিট পর রিপ্লে আসলো-
- এটা কি ছিল?
আমি নির্বাক হয়ে যাই তার রিপ্লাই দেখে।
- যা সত্য তাই বলছি।
- ভার্চুয়াল রিলেশন, বুঝতে পারো?
- আমি শুধু জানি তোমাকে ভালবাসি।
- আর আমি সেটা বুঝি না, এটা কেন বললে?
- বললাম তো আমি লুকাতে পারি না।
- ভাল থেকো, আসি।
- কিন্তু আমার কথার উত্তর দাও। প্লিজ, ভুল হয়ে গেল তার জন্য সরি।
এরপর আর তার নামের পাশে আর সবুজ বাতি দেখতে পাই নি। কিন্তু আইডিটা নীল থেকে কালো হয় নি। দিন কেটে সপ্তাহ যায়, সপ্তাহ ফুরিয়ে মাস তবুও তার নামের
পাশে সবুজ বাতি পাই না। মেসেজের কোন রিপ্লে আসে না। মাস্টার্সের ভাল প্রস্তুতি ছিল কিন্তু আয়নাকে নিয়ে
ভাবতে ভাবতে তাও শেষ হয়ে যাচ্ছে। দিশেহারা হয়ে পড়ি, বুঝতে পারি আয়নাকে ছাড়া আমার দিন কত কষ্টে চলে। পড়ায় মন বসাতে পারছি না। ভাবলাম ফেসবুকে কিছুক্ষণ সময় কাটায়। লগ ইন করতেই দেখি একটা মেসেজ এবং সেটা আয়নার। লেখা ছিল, "হুম আমিও তোমায় ভালবাসি"।
ওর রিপ্লে পেয়ে দেহে যেন প্রাণ ফিরে এল। খুব ভাল লাগছিল। খুশিতে একটু কান্নাও পেলে। এরপর শুরু হয় নতুন অধ্যায়। একদিন আয়না বললো-
- আমি ব্রেক-আপ চাই।
- কেন?
- তুমি আমাকে ভালবাসো না তাই।
- কে বলছে ভালবাসি না?
- আমি প্রমাণ পেয়েছি।
- কি প্রমাণ?
- তুমি একটা গাধা! এতদিন হল আমাদের পরিচয় কিন্তু আজ পর্যন্ত আমার ফোন নাম্বার চেয়েছো?
- আসলে তুমি কিছু মনে করো কি না সে ভয়ে চাই নি।
- বলদ কোথাকার। নাম্বার চাও এক্ষুনি।
- তোমার নাম্বারটা কি দেয়া যাবে?
- না।
- প্লিজ....
- 0
- তারপর?
- তারপর কিছুই না।
- মানে?
- ১১ডিজিটের নাম্বার ১১দিনে পাবে
- হায় হায়, এটা কেমন অবিচার?
- Honest Injustice man.
আয়না তাই করলো। ১১দিনে একটা একটা করে নাম্বার আমাকে বললো। পরীক্ষার কারণে ফেসবুকিং কমিয়ে দিলাম। কিন্তু ফেসবুকের ঘাটতিটা মোবাইলে পূরণ করতাম। একদিন ওকে দেখার করার প্রস্তাব দেই কিন্তু সে দেখা করতে নারাজ। সোজা কথায় বললো, চাকরি যেদিন পাবে সেদিন দেখা করবো। কিছুটা হতাশ হয়ে পরি ওর কথায়।
পরীক্ষা শেষ করে আমি গ্রামে চলে আসি। এর মাঝে রেজাল্টে দেয়। আল্লাহর অশেষ রহমতে এবারও ফার্স্টক্লাস পেয়েছি। এবার চাকরি খোঁজার পালা। আয়না আমাকে একটা চাকরির সার্কুলার দিল। সেখানে আবেদন করলাম এবং ইন্টারভিউ দিতে গেলাম। আল্লাহর কাছে দুই হাত তোলে দোয়া করলাম চাকরি হওয়ার জন্য। আলহামদুলিল্লাহ ইন্টারভিউ ভালো হলো এবং বেশ ভালো পদে চাকরিটা পেয়ে যায়।
চাকরি পাওয়ার পরে আয়নাকে দেখা করতে বলি, কিন্তু তবুও সে দেখা করতে নারাজ। তার একটায় কথা সে জানুয়ারি মাসে দেখা করবে, এর আগে না। তাকে বলি, সে তো এখনও অনেক দেরি। তার উত্তর, সবুরে মেওয়া ফলে। প্রতিদিন অফিসে যেতাম ঠিকই কিন্তু মন পড়ে থাকতো কবে জানুয়ারী মাস আসবে, কবে আয়নার সঙ্গে দেখা করবো।
অবশেষে এল সেই মহেন্দ্র মাস। এদিকে অফিস থেকে জানান দিল জানুয়ারি মাসে পিকনিকে যাবে, স্থান কক্সবাজার। জায়গাটা দেখার অনেক ইচ্ছা কিন্তু এই মাসে যে আয়নার সাথে দেখা করতে হবে। তাই আমি না করে দিই কিন্তু কলিগরা যাওয়ার জন্য জোর করে। আয়নাকে বিষয়টা জানায়। সেও আমাকে জোর করে যাওয়ার। দেখা করার কথা বললে সে জানায়, পিকনিকের পরে দেখা করবে এবং ওরা নাকি ফ্যামিলি ট্যুরে যাচ্ছে।
পিকনিকের তারিখ ঠিক হলো এবং ঢাকা অফিসের বিভিন্ন শাখা থেকে প্রায় দুইশো জন অফিসার যাচ্ছে। সন্ধ্যার সময় অফিসে উপস্থিত হওয়ার জন্য বলা হয়েছে। যথাসময়ে অফিসে পৌছে দেখি আটটা
বিলাসবহুল এসি বাস দাড়িয়ে। মোটামুটি ব্যয়বহুল
পিকনিক। রাত আটাটার দিকে বাস ছাড়লো। বাসে এক ঘুমে সকালে উঠে দেখি কক্সবাজার। হোটেল কক্স টুডে তে থাকার ব্যবস্থা হয়েছে সবার।
এতকিছুর মাঝে মনটা পড়ে রয়েছে আয়নার কাছে। কিন্তু সে আমাকে কল করতে বারণ করেছে। কারণ
সে তার মা বাবার সাথে থাকবে। বিকেলের দিকে আর না পেরে আয়নাকে কল দিই।
- হ্যালো আয়না।
- কেমন আছো?
- ভাল না।
- কেন?
- তোমার সাথে দেখা না করে এখানে চলে এলাম তাই।
- আরে পাগল, দেখা তো হয়েই যাবে একদিন।
- সেদিন আর আসে না কেন?
- দেখবে খুব শীঘ্রই আসবে।
- দেখি কিভাবে আসে। কি করছো?
- ছাদে বসে আছি। বাতাসে আমার চুলগুলো উড়ছে।
- আমি কল্পনা করছি তোমাকে দেখতে কেমন লাগবে।
- আচ্ছা মনে করো; আমি দেখতে ভাল না, কালো, মোটা, খাটো তাহলে কি আমাকে গ্রহণ করবে না?
- তুমি যেমনই হও তবুও তোমাকে ভালবেসে যাবো।
- দেখা যাবে কেমন গ্রহণ করো।
- হুম।
- পশ্চিম আকাশে সূর্যটা দেখছো?
- হুম দেখছি। খুব সুন্দর আর স্পষ্ট।
- আমি ওটাই দেখছি আর তোমার কথা ভাবছি।
- ওয়াও! বেশ রোমান্টিক তো!
- হিহিহি! আচ্ছা রাখি, আব্বু এসে পরেছে।
পরেরদিন সন্ধ্যার পরে সংস্কৃতির আয়োজন করা হলো। অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার আগে ডিরেক্টর, চেয়ারম্যান এবং সিনিয়র অফিসাররা বক্তব্য দিলেন। এবার সংগীতের পালা। উপস্থাপক রহমান সাহেব বললেন, "অনুষ্ঠানের উদ্ভোদনী গান নিয়ে আসছেন আমাদের ডিরেক্টর স্যারের মেয়ে সামিয়া ইসলাম আয়না।
নামটা শুনেই আমার ভিতরটা কেমন মোচড় দিয়ে উঠল। এই কি সেই আয়না যাকে আমি ভালবাসি! খুব চাচ্ছিলাম এই যেন সেই না হয়। মনের অস্থিরতা বেড়েই চলছে। এসব ভাবতে ভাবতে মেয়েটা গান ধরলো। গানের গলা শুনে বুঝতে পারলাম এই সেই আয়না। আমার হাত-পা কাঁপতে লাগলো। শেষ পর্যন্ত ডিরেক্টরের মেয়ের সাথে রিলেশন! লোকে যদি জানে ডিরেক্টর স্যারের মান সম্মান থাকবে না। আর সঙ্গে আমার চাকরি নট।
এতক্ষণে বুঝতে পারলাম; আয়না কেন আমার সাথে দেখা করতে চায় নি, কেন সে পিকনিকে যেতে জোর করছিল, চাকরির ফর্ম, চাকরির ব্যবস্থা এগুলা সব আয়নারই কাজ। এত ভালবাসে আমাকে? আমি আর বসে থাকতে পারলাম না, অগোচরে বেড়িয়ে আসি। আয়না খেয়াল করেছে কিনা লক্ষ্য করি নি।
এরপরের দিন রুম থেকে বের হয় নি, শুধু মাত্র খেতে যাওয়া ছাড়া। কেমন জানি নিজের মধ্যে জড়তা কাজ করছিল।
দেখতে দেখতে তিনদিন কেটে গেল। এবার ফেরার পালা। আসার সময় গ্রীণ লাইনে ছিলাম আর এখন হানিফের ভলভোতে আছি। আমি গিয়ে পিছনের সীটে বসি। আমার পাশে এবং তার পরের সীট খালি কেন সেটা বোধগম্য হলো না। এত বিলাসবহুল বাসের সিটে বসেও আমার চোখে একদমই ঘুম নেই। কোনো এক অজানা কারণে চোখের পাতা এক করতে পারছি না। চোখ বুজে আছি তখন বুঝতে পারলাম কেউ একজন পাশে এসে বসেছে।
- সরি।
কণ্ঠ শুনে চোখ মেলে তাকায়। আয়না আমার পাশে। কেউ যদি দেখে নির্ঘাত কেলেংকারী বাধবে।
- সরি বলছেন কেন?
- তুমি আপনি করে কথা বলছো কেন?
- আমি বুঝতে পারি নি আমি কাকে ভালবেসেছি।
- এজন্যেই তো সরি বললাম।
- এত নাটক করলে কেন আমার সাথে?
- কারণ তোমায় যে ভালবাসি। সেদিন থেকে যেদিন তোমার প্রথম লেখা পড়েছিলাম।
- মানে, কবে?
- প্রায় চার বছর আগে। তোমার একটা গল্প পড়ে তোমার প্রেমে পড়েছিলাম। এরপর তোমার ব্যাপারে খোঁজ নিই তোমার এক বন্ধুর থেকে। সে আবার আমার ফ্রেন্ডলিষ্টে ছিল। তারপর তো সবকিছুই জানো তুমি।
- হুম, আসলেই নিজেকে লুকিয়ে রাখতে পারলাম না।
- কিন্তু তুমি তোমার নাম গোপন রেখে আমাকে মিথ্যা বলছো কেন?
- ভুল হয়েছে, সরি।
- মাফ নাই।
- কেন?
- আমার ইচ্ছা।
- আচ্ছা ডিরেক্টর স্যার কিছু জানে?
- ডিরেক্টর মানে? উনি তোমার শ্বশুর। আর আব্বু না জানলে তোমাকে এই বাসে উঠালাম কিভাবে?
আয়নার কথা শুনে ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে। সাহস করে আয়নার হাতখানা নিজের দখলে নিই। আয়নাও এমন কান্ড দেখে ফিঁক করে হেসে ওঠে।
আসলেই কাছের মানুষের কাছ থেকে নিজেকে লুকিয়ে বা দূরে রাখা যায় না।
সমাপ্ত
পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেমকাহিনী
তানভীর আহমেদ আছিফ
Post a Comment
কমেন্টে স্প্যাম লিংক দেওয়া থেকে বিরত থাকুন