![]() |
গল্প ক্ষমা - ক্ষমা করে দিও প্রিয় তুমি Golpo khoma Bengali |
আজ অফিস থেকে তাড়াতাড়ি ফিরে এসেছে মুহিব। আজকে ঐশীকে নিয়ে দাওয়াতে যাওয়ার কথা ছিল তার। যদিও মুহিব তাড়াতাড়ি ছুটি পাবে কি না সেই ব্যাপারে সে নিশ্চিত ছিল না। কিন্তু ছুটি পেয়ে সে ঐশীকে জানায়নি। ভেবেছে বাড়ি গিয়ে সারপ্রাইজ দেবে। বাড়ি পৌছে দরজায় নক করে ঐশীর কোন সাড়া পেল না মুহিব। দরজা খোলা ছিল তাই সে সোজা রুমে চলে গেল। গিয়ে দেখলো ঐশী কারো সাথে ফোনে কথা বলছিল। মুহিবকে দেখে থতমত খেয়ে গেল ঐশী। তারপরে কিছুক্ষণেই জড়তা কাটিয়ে ঐশী বলল,
-- আপনি এখন?
-- কার সাথে কথা বলছিলা?
-- মিতা আপার সাথে।
-- ওহ্। আমার একটু দেরি হওয়ার কথা ছিল
বাট তাড়াতাড়ি পৌছে গেলাম।
-- দেরি হওয়ার কথা ছিল মানে?
-- আজ না আমাদের বড় মামার বাড়ি দাওয়াত।
তুমি এখনো রেডি হওনি যে?
-- ওহ্ সরি সরি। আমি আসলে ভুলে গেছিলাম।
-- ওকে। রেডি হয়ে নাও।
ফ্যান ছেড়ে সোফায় বসে পড়ল মুহিব। ঐশীর এমন আচরণে অনেক অবাক হয়েছে মুহিব। সে মনে মনে ভাবছে, 'দাওয়াতে যাওয়ার কথাও কি ভুলে যাওয়ার কথা। আর মিতা আপার সাথে যদি কথা বলে তাহলে আমাকে দেখে এতো থমকে যাওয়ার কারণ কি?'
ঐশীর সাথে ছয়মাস হলো বিয়ে হয়েছে মুহিবের। বিয়েটা পারিবারিকভাবেই হয়েছে। নতুন সংসার তাদের। কিন্তু ওদের নিজেদের মধ্যে এখনো জড়তা কাটেনি। ঐশী কম কম কথা বলে মুহিবের সাথে। ঐশীকে দেখে মুহিবের বারবার মনে হয় সে মন থেকে মুহিবের সাথে নেই। জোর করে ইচ্ছার বিরুদ্ধে থাকছে।
এসব ভাবনা বাদ দিয়ে মুহিব উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলো। ওর রেডি হতে হতে ঐশী রেডি হয়ে চলে এলো। ঐশীর সাজ দেখে মুহিব তেমন খুশি হয়নি। সে এক্সপেক্ট করেছিল ঐশী আজ শাড়ি পরবে। তাই মুহিব বলল,
-- শাড়ি পরতে পারতে।
-- হাতে সময় কম তাই পরলাম না।
মুহিব আর কিছুই বলল না।
কোন বিষয়েই মুহিব ঐশীকে জোরাজোরি করে না। ঐশীর ইচ্ছা অনিচ্ছার যেমন দাম দেয় মুহিব ঠিক তেমনি তার ইচ্ছা অনিচ্ছার তো সামান্য দাম থাকা উচিত এই ভেবে মুহিবের নিজের ওপরেই রাগ হয়। তাদের বিয়ের অনুষ্ঠান ছাড়া একদিনও শাড়ি পরেনি ঐশী। মুহিব দু একবার বলেছে কিন্তু কানে নেয়নি তাই মুহিব বলা বাদ দিয়েছে। বিবাহিত পুরুষের ইচ্ছা করে তার বউ মাঝেমাঝে শাড়ি পরে সেজেগুজে এসে তার সামনে দাঁড়াক।
মুহিব বাড়ি থেকে বেরিয়ে একটা রিকশা নিল। রিকশায় উঠে কেউ কারো সাথে কথা বলল না। দুপুর গড়িয়ে গেছে তাই মামার বাড়ি পৌছেই ওরা দ্রুত খাওয়াদাওয়া সেরে নিল। তারপরে লাঞ্চ শেষে ঐশী, মুহিব, তার মামাতো ভাই, ভাবী ড্রয়িং রুমে বসে গল্প করছিল। মুহিবের ভাবী ঐশীকে বলল,
-- তুমি কি সাজগোজ কম পছন্দ করো নাকি?
ঐশী বলল,
-- না, ঠিক তা নয়।
-- আমি তো বিয়ের পর কয়েকমাস কোথাও
গেলেই শাড়ী পরে বের হতাম। আমার
সাজগোজ করতেও অনেক ভালো লাগে। আর
তোমার ভাইয়ারও শাড়ী পরা অনেক পছন্দ।
মুহিব তখন তার ভাবীকে বলল,
-- এক্চুয়ালি ভাবী, দেরি হয়ে যাচ্ছিল তাই
আমিই নিষেধ করেছি।
মুহিবের জবাব শুনেও ঐশীর তেমন কোন প্রতিক্রিয়া নেই। ঐশী বারবার ফোনের দিকে তাকাচ্ছিল। কারো একটা ফোন আসছে কিন্তু ঐশী কেটে দিচ্ছে বারবার তা মুহিব ভালোই লক্ষ্য করেছে।
মামার বাড়িতে প্রথমবার আসায় অনেক গিফট পেয়েছে ঐশী। অন্য বাড়ির বউরা হলে অনেক এক্সাইটমেন্ট নিয়ে সেগুলো দেখতো কিন্তু একটা গিফটও খুলে দেখেনি ঐশী। মুহিব ল্যাপটপে কাজ করছিল আর তার বউয়ের কান্ডগুলো অনুধাবন করার চেষ্টা করছিল। হঠাৎ অফিস থেকে ফোনকল আসায় মুহিব বাইরে চলে গেল। ফিরে এসে দেখলো ঐশী মেসেজিং করছে। তার মুখে মুচকি হাসি। মুহিবের কাছে এই ধোঁয়াশাগুলো অসহ্য হতে চলেছে। এর আগে অনেকবার ঐশীকে কারো সাথে ফোনে কথা বলতে দেখেছে মুহিব। গুরুত্ব দেয়নি সে। কিন্তু একজন সদ্য বিবাহিত পুরুষের কাছে তার স্ত্রীর নিত্যদিনের এই কাজগুলো মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।
ঐশীর সাথে যখন মুহিবের বিয়ের কথা চলছিল
তখনই মুহিব ঐশীকে জিজ্ঞেস করেছিল তার কারো সাথে সম্পর্ক আছে কি না বা তাকে জোর করে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে কি না। কিন্তু ঐশী পরিষ্কার জানিয়েছিল সে স্বেচ্ছায় বিয়ে করছে। তাহলে বিয়ের পরে এতো কেন জড়তা। এসব ভাবতে ভাবতে অস্থির হয়ে যাচ্ছে মুহিব।
মুহিব এসব ভাবছিল তখন ঐশী বলল,
-- কাল আমি একটু বাইরে যাবো।
মুহিব ওর দিকে না তাকিয়েই জবাব দিল,
-- কেন?
-- আমার কিছু কেনাকাটা করা প্রয়োজন।
মুহিব আর কিছুই বলল না।
সকালে তাড়াহুড়া করে অফিসে চলে যাওয়ায় দুপুরের খাবার প্যাক করে নিতে ভুলে গেছে মুহিব। দুপুরে কাজের তেমন চাপ ছিল না তাই মুহিব কাছাকাছি একটা রেস্টুরেন্টে চলে গেল। রেস্টুরেন্টে ঢুকতেই মুহিবের চোখে পড়লো ঐশী একটা ছেলের সাথে রেস্টুরেন্টে বসে আছে। মুহিব একপ্রকার ধাক্কা খেল। একবার তার মনে হলো সামনে গিয়ে কষে একটা চড় মেরে দিতে। কিন্তু পাবলিক প্লেসে সিন ক্রিয়েট না করে সে ফেরত চলে এলো। অফিসে এসে সে শরীর খারাপের কথা বলে দ্রুত বাসায় চলে এলো। ততক্ষণেও ঐশী বাড়ি ফেরে নি। মুহিবের প্রচন্ড রাগ হচ্ছে নিজের ওপর। ইচ্ছা করছে সব জিনিসপত্র ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করতে।
মুহিব ঐশীর আসার জন্য অপেক্ষা করছে। সে চেঞ্জ পর্যন্ত করে নি। বিকেল গড়িয়ে গেছে। সন্ধ্যার ঠিক আগমুহূর্তে ঐশী বাড়ি ফিরে এলো। রুমে ঢুকে মুহিবকে দেখে সে চমকে গেল। সে মোটেও এসময়ে মুহিবকে বাড়িতে এক্সপেক্ট করেনি। সে অবাক স্বরে বলল,
-- আপনি এখনই?
-- তোমার শপিং শেষ হলো?
-- জ্বী, একটু লেট করে বেরিয়েছিলাম। আর
একটু নেহার বাড়িতে গিয়েছিলাম তাই
আসতে লেট হলো।
-- ওহ্। কি কি শপিং করেছো দেখি?
-- ঘুরে ঘুরে কিছুই পছন্দ হয়নি তাই চলে
এসেছি।
ঐশীর মিথ্যাগুলো শুনে মুহিব মুচকি হাসলো কিন্তু কিছুই বলল না। সে হনহন করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল। ঐশী বেশ অবাক হলো।
রাত দশটায় বাড়ি ফিরলো মুহিব। এসে দেখলো ঐশী শুয়ে শুয়ে ফোন ঘাটাঘাটি করছে। মুহিব ঐশীর হাতে একটা পেপার ধরিয়ে দিয়ে বলল,
-- এখানে সাইন করো।
-- মানে? এটা কি?
-- ডিভোর্স পেপার।
ঐশী থতমত হয়ে বলল,
-- হোয়াট?
-- হ্যা, আমি তোমার থেকে মুক্তি চাচ্ছি। তোমার
মতো নোংরা মেয়ের সাথে আমার আর এক
বাড়িতে থাকা পসিবল না।
-- এক্সকিউজ মি, ওয়াচ ইওর মাউথ বিফর
স্পিকিং। নোংরা মেয়ে মানে কি হ্যা?
আপনার সাহস কিভাবে হয় আমাকে এই কথা
বলার?
মুহিব রাগে ঐশীর একদম কাছে এসে বলল,
-- জাস্ট কিপ ইওর ভয়েস ডাউন। অনেক
হয়েছে তোমার নাটক। আমি ভদ্রলোক বলে
এখন পর্যন্ত ভদ্র ভাষায় বলছি। আমাকে বাধ্য
করো না খারাপ কিছু করতে।
-- আমি এসবের কারণ জানতে চাই।
-- শুনে সহ্য হবে তো?
-- আমি যা করি তা শোনার সক্ষমতা রাখি।
-- বিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও যে মেয়ে তার
বয়ফ্রেন্ডের সাথে দিনের পর ফোনে কথা বলে,
মেসেজিং করে, রেস্টুরেন্টে বসে গল্প করে
তাকে আর যাই হোক ভালো মেয়ে বলে না।
বলে মুহিব পকেট থেকে ঐশীর কল ডিটেইলস বের করে দিল। কার সাথে ঐশী কখন কখন কথা বলেছে সেই টাইম ডিটেইলস এখানে দেওয়া আছে। ঐশীর মুখচোখ ভয়ে লাল হয়ে গেছে। মুহিব মুচকি হেসে বলল,
-- Sorry, I know this is kind of crime but I
had to do this. Now just sign the
divorce paper and get the hell out my
life.
ঐশী ধপ করে বিছানায় বসে পড়লো। সে ভয়ে কাঁপছো, কি বলবে বুঝতে পারছে না। তার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। মুহিব আলমারি থেকে ঐশীর সব জামাকাপড় বের করে মেঝেতে ফেলল। তারপরে সাজগোজের জিনিসপত্রও ছুঁড়ে ফেলল। তারপরে বলল,
-- তাড়াতাড়ি এগুলো গুছিয়ে বেরিয়ে যাও।
আদারওয়াইজ আমি আগুন ধরিয়ে দিবো।
ঐশী দ্রুত উঠে মুহিবের হাত ধরে বলল,
-- ট্রাস্ট মি, শান্তর সাথে আমার কোনো সম্পর্ক
নেই। ওর সাথে আমার লাস্ট একটা
বোঝাপড়া প্রয়োজন ছিল তাই আমি
গিয়েছিলাম। এর বেশি কিছুই নয়। আমি
মাত্র পনেরো মিনিট তার কথাগুলো শুনেছি।
মুহিব নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে ঐশীর গালে একটা চড় বসিয়ে দিল। তারপরে হাসতে হাসতে বলল,
-- ওহ্, শান্ত? নামটা জানতাম না অবশ্য। আর
ট্রাস্ট? ট্রাস্ট তাকেই করা যায় যে সত্য কথা
বলে। আমার হাত ছাড়ো। তোমার স্পর্শে
আমার ঘৃণা লাগছে।
ঐশী ভয়ে মুহিবের হাত ছেড়ে দিল। ঐশী কান্না বিজড়িত কন্ঠে বলল,
-- প্লিজ আপনি আমাকে ডিভোর্স দিবেন না।
আমি কিভাবে বাসায় মুখ দেখাবো।
-- তুমি কি করবা না করবা আমি সে বিষয়ে
ইন্টারেস্টেড না। বাট তোমার সাথে আমার
থাকা পসিবল না।
ঐশী মুহিবের পা জড়িয়ে ধরে ওকে বুঝিয়ে বলতে শুরু করলো,
-- বিশ্বাস করুন আমার ওর সাথে কোন প্রকার
সম্পর্ক নেই। বিয়ের অনেক আগেই আমাদের
ব্রেকাপ হয়ে যায়। কিন্তু সে আমাকে ধোকা
দিয়েছিল তাই সে ইদানিং রেগুলার ফোন,
মেসেজ দিয়ে আমার সাথে কথা বলার চেষ্টা
করতো। আপনি তো কল ডিটেইলস চেক
করেছেন। কতটুকু কথা আছে ওর সাথে
আমার? আমরা কখনো ব্রেকাপের কারণ নিয়ে
মুখোমুখি কথা বলার সুযোগ পাইনি। তাই
সে দেশ ছাড়ার আগে আমাকে শেষবার
রিকুয়েস্ট করেছিল আমি যেন তার কথাগুলো
এট লিস্ট শুনি। দিজ ইজ দ্য অনলি রিজন
আই ওয়েন্ট টু মিট হিম।
মুহিব কানে হাত দিয়ে বলল,
-- স্টপ ইট। পা ছাড়ো।
বলে মুহিব তড়িঘড়ি বাড়ি থেকে বেরিয়ে তার এক বন্ধুর বাড়িতে চলে গেল।
ঐশী মেঝেতে বসে রিলো। ঐশী বাড়িতে একা। সে অনবরত কেঁদেই চলেছে। মুহিব সারারাত বাড়ি ফিরেনি। সে ভাবছে, 'একটা ভাঙ্গা সম্পর্কের শেষ জানতে গিয়ে আমার সবকিছু শেষ হয়ে গেল। একজন ধোকা দিয়ে অন্য কারো সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছিল। এখন সে ক্ষমা চেয়ে নিজেকে মুক্ত করতে চায়। আর একজন মিথ্যা বিশ্বাস করে আমাকে ছাড়তে চাচ্ছে। জীবনটা কি কোনদিন সুখের হবেনা আমার? সবসময় আমাকেই কষ্ট পেতে হবে? '
সকালে অফিসে যাওয়ার আগে মুহিবকে বাধ্যগত বাড়িতে আসতে হয়েছে। কারণ অফিসের কিছু জরুরি ফাইল তাকে বাড়ি থেকে পিক করতে হতো। ঐশী বিছানায় বসে আছে। মুহিবকে রুমে ঢুকতে দেখে সে উঠে দাঁড়ালো। মুহিব একপলক ঐশীর দিকে তাকিয়ে দেখলো। ঐশীর চোখে তখনও জল। চোখগুলো ফুলে আছে ওর। কাল রাতে রাগে চড় মেরেছিল মুহিব তার ছাপও ঐশীর ফর্সা গালে বেশ ফুটে আছে। মুহিব কোনো কথা বলল না। ঐশী ভয়ে ভয়ে ওর সামনে গিয়ে বলল,
-- প্লিজ আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিবেন
না। আপনি আমাকে ইচ্ছামতো কষ্ট দিন আমি
সহ্য করে নিবো কিন্তু আমাকে ডিভোর্স দিবেন
না। আমার ভুল হয়ে গেছে। আমাকে একটা
সুযোগ দিন প্লিজ।
মুহিব পেছনে সরে গিয়ে বলল,
-- তুমি নিঃসন্দেহে এ বাড়িতে থাকতে পারো।
বাট আমার সাথে নয়। আমি বাড়িতে থাকা
অবস্থায় তুমি আমার সামনে আসবা না।
আমরা একরুমে থাকবো না। একসাথে খাবো
না আর একসাথে কোথাও যাবো না। আমি
এগুলো শুধু তোমার অসুস্থ বাবার কথা ভেবে
করছি যেন উনি মেয়ের কুকীর্তি শুনে আবার
হার্ট অ্যাটাক না করেন। গতমাসেই উনার হার্ট
অ্যাটাক হয়েছিল। আর এদিকে উনার
বিবেকহীন মেয়ে এসব নষ্টামি করে বেড়াচ্ছে।
ছিঃ। জাস্ট স্টে এওয়ে ফ্রম মি।
বলে মুহিব রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
ঐশী মুহিবের এই কড়া কথার মধ্যেও একপ্রকার স্বস্তি খুঁজে পেল। রুমের জিনিসপত্র সব মেঝেতে ছিটিয়ে রেখেছে মুহিব। সেগুলো গুছিয়ে অন্য রুমে শিফট্ করে মুহিবের রুমটা গুছিয়ে দিল ঐশী। কারণ আজ থেকে তার এই রুমে থাকার অধিকার আর নেই।
কাল দুপুর থেকে মুহিব না খেয়ে ছিল। রাতে যা কান্ড হয়েছে তাতে সকাল পর্যন্ত কারোই খাওয়াদাওয়া হয়নি। আর ঐশীর খেতে ইচ্ছাও করছেনা তাই সে দুপুরে রান্না করেনি। সন্ধ্যায় সে মুহিবের জন্য রান্না করে টেবিলে সাজিয়ে রেখেছে। কারণ মুহিব আসলেই তাকে দূরে চলে যেতে হবে।
রাতে মুহিব এসে রুমে ঢুকে দেখলো তার রুমটা সুন্দরভাবে সাজানো। মুহিবের টেবিলের ওপরে ঐশী তার মোবাইলটাও রেখে গেছে। দেখে মুহিবের মেজাজটা খারাপ হচ্ছে। সে ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং টেবিলে বসে দেখলো সব খাবার সুন্দর করে সাজানো আছে। সে খেয়ে চলে এলো। রুমে এসে তার মনে হলো, 'ঐশী হয়তো খায়নি। তাতে আমার কি? সিম্প্যাথি দেখাতে গেলে মাথায় চড়ে বসবে। ভালো লাগলে খাবে, না লাগলে না। আমার কিছু যাবে আসবে না।'
মুহিব শুয়ে টিভি দেখছিল। হঠাৎ ঐশীর ফোনটা বেজে উঠলো। মুহিব তাকাতে চাচ্ছিল না তারপরেও চোখকে আটকাতে পারলো না। দেখলো ২৪০০০ নাম্বার থেকে কল এসেছে। মুহিব কি যেন ভেবে ফোনটা হাতে নিল। তার ইচ্ছা করছিল ফোনটা ঘুরে দেখতে কিন্তু পারমিশন ছাড়া কারো ফোন চেক করা উচিত নয়। এসব ভেবে মুহিব ফোন রেখে দিল। তারপরে আবার ভাবলো যে মেয়ে মিথ্যা কথা বলে তার কাছে আবার কিসের পারমিশন ! মুহিব ঐশীর ফোনটা হাতে নিল। ফোনে কোন লক ছিল না। সে মেসেজ অপশন চেক করে দেখলো শান্ত ঐশীকে দেখা করার রিকুয়েস্ট করে অসংখ্য মেসেজ পাঠিয়েছে কিন্তু কোন রিপ্লাই যায়নি ঐশীর ফোন থেকে। অথবা ঐশী ইচ্ছা করেই ডিলেট করে দিয়েছে। কল তো আগেই দেখেছে মুহিব। সে এবার মেসেঞ্জার চেক করলো। কনভারসেশনে সামনের দিকে ঐশীর বান্ধবী কাজিনদের সাথে গল্প গুজব রয়েছে। পুরোনো কনভারসেশনের মধ্যে শান্তর কনভারসেশন খুঁজে পেল মুহিব। শান্তর লাস্ট মেসেজ দেড়বছর আগের। তারপরেও মেসেজ ব্লক করা। শুধু লাস্ট কয়েকটা মেসেজ পড়লো মুহিব। সেখানে সরি লিখে কয়েকটা মেসেজ করা ছিল। ঐশীর রিপ্লাই ছিল না।
মুহিব ফোনটা রেখে দিল। মুহিবের মনে হলো, 'তবে কি ঐশী সত্য বলছিলো? কিন্তু সে অলরেডি অনেক মিথ্যাও বলেছে। কোনটা বিশ্বাস করবো?' এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লো মুহিব।
সকালে অফিসে যাওয়ার সময় ঘড়ি খুঁজে পাচ্ছিল না মুহিব। সে ঐশীর সাথে কথা বলবে না। আবার না বললেও হচ্ছে না। অফিসের দেরি হয়ে যাচ্ছে। মুহিব চেঁচিয়ে বলল, 'আমার ঘড়ি খুঁজে পাচ্ছি না। '
ঐশী দরজার সামনে এসে দাঁড়ালো। তারপরে ড্রেসিংটেবিলের ড্রয়ার থেকে ঘড়িটা বের করে দিয়ে বেরিয়ে গেল। মুহিবের দিকে তাকালো না।
রাতে খেতে বসে মুহিব দেখলো ঐশী খায়নি। দুদিন থেকে সে তেমন কিছুই খায়নি। ঐশী দূরেই দাঁড়িয়ে ছিল। দুদিনেই চোখগুলো গর্তে ঢুকে গেছে ওর। মুহিব তাচ্ছিল্য করে বলল,
-- না খেয়ে কাকে দেখাচ্ছো? কি ভাবছো
সিম্প্যাথি দেখিয়ে কাছে টেনে নিবো? ভুলভাল
ধারণা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো। না খেয়ে
অসুস্থ হলে কিন্তু আমাকে সত্যিটা তোমার
বাসায় জানাতে হবে। আমার আবার তোমার
মতো গড়গড় করে মিথ্যা বলার অভ্যাস নাই।
অপমান শুনে ঐশীর চোখজোড়া জলে ভিজে উঠলো। সে জানে সে অন্যায় করেছে তার জন্য সে সরিও বলেছে। কিন্তু পদে পদে অপমানগুলো হজম করতে তার প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে।
আজ কি যেন ভেবে ঐশী একটা সুতি শাড়ি পরে বসে আছে। দাওয়াতের দিন সে স্পষ্ট বুঝেছে মুহিব তাকে শাড়ি পরে দেখতে চায়। অফিস থেকে এসে ঐশীকে শাড়ি পরে দেখে চমকে গেল মুহিব। তারপরে হেসে বলল, 'ওয়াও। কারো আসার কথা ছিল নাকি? শাড়ি তো তুমি আমার জন্য পরো নাই।'
শুনে ঐশীর মুখটা ছোট হয়ে গেল।
এভাবে একছাদের নিচে দুটো আলাদা রুমে সংসারজীবন কাটছে ঐশীর আর মুহিবের। আর দুবেলা মুহিবের কটাক্ষ শুনছে ঐশী।
সকালে ব্যাংকে একটা জরুরি কাজে গিয়েছিল মুহিব। সে অপেক্ষা করছিল ঠিক সেই মুহুূর্তে পেছন থেকে একটা মেয়ে কন্ঠ মুহিবকে সালাম দিল। মুহিব পেছনে ঘুরে দেখলো এটা ঐশীর বান্ধবী নেহা। মুহিব সালামের উত্তর দিল। তারপরে নেহা বলল,
-- ভাইয়া, আপনি এখানে?
-- একটু কাজ ছিল।
-- ভালোই হলো আপনার সাথে দেখা হয়ে।
ঐশীকে কয়েকদিন থেকে ফোনে পাচ্ছি না।
মুহিবের মনে পড়লো ঐশীর ফোন তার টেবিলেই কদিন যাবত পড়ে আছে। চার্জের অভাবে বন্ধ হয়ে আছে। মুহিব বলল,
-- ফোনে একটু প্রবলেম হয়েছে। আমি বাড়ি
গিয়ে বলবো আপনাকে ফোন দিতে।
-- আচ্ছা। সময় করে একদিন আমাদের বাড়িতে
বেড়াতে আসবেন। সেদিন দুপুরে ঐশী একাই
এলো আপনি তো এলেন না।
-- অফিসে ব্যস্ত ছিলাম। আপনিও বেড়াতে
আসবেন ফ্যামিলি নিয়ে।
-- জ্বী।
মুহিব বুঝতে পারলো ঐশী নেহার বাড়িতে যাওয়ার কথাটা সত্যি বলেছিল সেদিন।
রাতে ঐশী বিছানায় শুয়ে আছে। শরীর খারাপ তার। বিছানায় শুয়ে সে এই দিনগুলোর কথা ভাবছে আর চোখ দিয়ে জল পড়ছে তার। মুহিব অফিস থেকে আসার পরে একবারো ঐশীকে আশেপাশে ঘুরতে দেখে নি। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে সে ঐশীর রুমে নক করলো। দরজা খোলা ছিল তাই সে রুমে ঢুকতেই ঐশী উঠে বসলো। ঐশী অন্যদিকে ঘুরে চোখের জলটা মুছে নিল। চোখজোড়া লাল হয়ে ছিল ওর। মুহিব ওর পাশে গিয়ে বসলো। কিছুক্ষণ চুপ থেকে সে বলল,
-- খেয়েছো?
ঐশী আস্তে করে বলল,
-- না।
-- কেন?
-- এমনিতেই।
মুহিব ঐশীর কপালে হাত দিতেই ঐশী কেঁপে উঠলো। মুহিব বলল,
-- তোমার তো জ্বর।
এতদিনে কখনো মুহিব স্বাভাবিকভাবে ঐশীর সাথে কথা বলে নি। তাই ঐশী বলতে শুরু করলো,
-- আই অ্যাম সরি। প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে
দিন। আমার অন্য কারো সাথে সম্পর্ক রাখার
কোন ইনটেনশন নেই। আমি শুধু জানতে
চেয়েছিলাম কেন আমাকে সাফার করতে
হয়েছিল।
কথাটা বলতে গিয়ে ঐশী আবারো কেঁদে ফেলল। মুহিব ওর চোখের জল মুছে বলল,
-- আমি এ বিষয়ে আর কথা বলতে চাই না।
তুমি এসব ভুলে যাও। আমি তোমাকে বিশ্বাস
করেছি। আশা করি তুমি আমার বিশ্বাসের
মর্যাদা রাখবে।
বলে মুহিব ঐশীকে জড়িয়ে ধরলো।
ঐশী আর মুহিবের সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়েছে। তারা দুজন দুজনকে ভরসা করে সামনে এগিয়ে চলেছে। মাঝে একটা অধ্যায় ছিল যেখানে ক্ষমা আর একটু বিশ্বাস প্রয়োজন ছিল যা মুহিব করতে সফল হয়েছে। দিনশেষে তারা সুখী।
গল্প: ক্ষমা
লেখনীতে-- নূর-এ সাবা জান্নাত
Post a Comment
কমেন্টে স্প্যাম লিংক দেওয়া থেকে বিরত থাকুন