![]() |
গল্প - ফাঁপর - মোবাইল চোর গল্প - Mobile thief golpo in bengali |
গল্প ফাঁপর
পাবলিক বাসে ঠাসাঠাসি করে অফিস থেকে বাসায় ফিরছিলাম। বাস থেকে নেমেই দেখি প্যান্টের পকেটে মোবাইল নেই।
নিমিষে থমকে গেলাম। কয়েক মিনিট আগেও তো পকেটে ছিল! হটাত কি হলো! গলা শুকিয়ে কাঠ। মোবাইল হারানোর শোকে মুহুর্তে পাথর হয়ে গেলাম। মাত্র সপ্তাহ খানেক আগে মোবাইলটা কিনেছি। অনেক দিন টাকা জমিয়ে সখের মোবাইলটা কিনেছি। এতই মন খারাপ হলো যে কিছুতে পা চলছিল না। অনেক কষ্টে বাড়ি পৌছলাম।
অফিসের ড্রেস না খুলেই শোয়ে পরলাম।
বউ বলল, "ঘটনা কী?"
"কোন ঘটনা নাই। এক গ্লাস পানি খাওয়ারে বইন।"
"ওমা কী হইছে! কী বলতেছ এসব ?"
"স্যরি আন্টি ভুল হয়ে গেছে।"
রুনা আমার শরীর ঝাকি দিয়ে বলল, "এই তোমার কি হইছে?"
"আমার সব শেষ হয়ে গেছে রুনা--" জড়িয়ে ধরে বললাম।
"আরে ধ্যাত, কি হইছে বলবা তো?"
"আমার মোবাইল চুরি হয়ে গেছে।"
"মাই গুডনেস। মোবাইল চুরি হয়েছে ? আমিত ভাবলাম না জানি ভয়ানক কিছু হয়ে গেছে! যা ভয় পাইয়ে দিয়েছিলে না?" বলেই নিজের বুকে একবার থুতু ছিটাল।
"আমার নতুন মোবাইলটা চুরি হয়ে গেল, তোমার কাছে কিছুই মনে হচ্ছেনা?"
"আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যি করেন।"
"দেখ এমনিতেই মাথায় রক্ত উঠে আছে। উল্টাপাল্টা কথা বললে হার্ট এটাক খেয়ে যেতে পারি কিন্তু। আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্য করেন মানে কী?"
"না মানে বলছিলাম এই মোবাইল তোমার আমার মাঝে দেয়াল হয়ে দাড়িয়েছিল। মোবাইলের কারনে তুমি আমাকে আগের মত সময় দাও না। ভালবাসো না।"
"খ্যাতাপুড়ি তোমার ভালোবাসার। আমি আছি মোবাইলের চিন্তায়। আর হে আছে ভালোবাসা নিয়ে। শালার একেই বলে মেয়েছেলে!"
রুনা পাশের ঘর থেকে নিজের মোবাইল এনে সমানে আমার নাম্বারে রিং দিতে লাগল।
হতাশ হয়ে একসময় বলল, "তোমার মোবাইল সুইচড অফ।"
আমি বিরক্ত হয়ে বললাম,"গাধার মত বার বার ফোন দিতেছ কেন? চুরি করা ফোন, কেউ ধরবে ?"
"যদি ধরে?"
.
রাত বারোটার সময় রুনা হটাত চিৎকার করে উঠল।
"এই শুনছ মোবাইলে রিং হচ্ছে- "
আমি ব্যস্তসমস্ত হয়ে মোবাইল ধরলাম। হ্যালো.. হ্যালো.. করতে লাগলাম।
ও পাশ থেকে কোন শব্দ হচ্ছিল না।
হাল ছাড়লাম না। ফোন কেটে আবার ফোন দিতেই লাগলাম। তৃতীয় বারে হটাত কেউ একজন ফোন ধরল--
পুরুষ কন্ঠ। বলল, "কে..?"
"ভাই আমি.. আমি.."
"ধমকের স্বরে বলল, আরে আমিটা কে?"
"ভাই আপনি যে মোবাইলে কথা বলছেন আমি সেই মোবাইলের মালিক।"
"জব্বর হুনাইলেন তো। মোবাইল আমার হাতে আর আপনি কইতাছেন আপনি মোবাইলের মালিক। নেশা-টেশা খান নাকি ?"
"না ভাই আমি কোন নেশা-টেশা করিনা। আমার চৌদ্দগুষ্টিতে কেউ নেশা টেশা করেনা।"
"তাইলেত আপনে ভদ্দর নোকের সন্তান।"
"ভাই আমি সপ্তাহ খানেক আগে মোবাইলটা কিনছি। অনেক সখের মোবাইল ভাই।"
লোকটা একবার হাই উঠাল। তারপর লাইনটা কেটে দিল..
নিরাশ আমি ফোন ধরে বসে রইলাম।
বউ বলল, "ঘটনা কী?"
"লাইন কেটে দিয়েছে।"
"অসুবিধা নাই। ফোন দিতেই থাকব। ধৈর্য হারালে চলবে না। দেখিনা শেষ পর্যন্ত কি হয়!"
.
পরদিন ছিল শুক্রবার। রুনা কাজের ফাক পেলেই ফোন দেয়। কিন্তু ফোন বন্ধ।
দুপুর বারোটার দিকে রুনা পাকের ঘর থেকে আবার চিৎকার করে উঠে।
আমি দৌড়ে আসি। "কি হয়েছে?"
"ধর ধর রিং হচ্ছে।"
ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে বলল, "কে..?"
"ভাই..ভাই আমি.. সেই মোবাইলের..
"অ আপনি। যা কইবেন তাড়াতাড়ি কন। জরুরি কাজ আছে।"
"ভাই ফোনটা আমার খুব দরকার। এর মধ্যে আমার জরুরি অনেক কিছু আছে। প্লিজ ভাই.. প্রয়োজনে আমি আপনাকে কিছু টাকা দেই, তবু আমার মোবাইলটা ফেরত দেন।"
"কত টাকা দিবেন?"
"পাঁচ হাজার দিব।"
"হুনেন আপনেরে একটা ভাল বুদ্ধি দেই। যেই টাকা আমারে দিতে চাইতাছেন হেই টাকার লগে আরো কিছু মিলাইয়া নতুন আরেকটা মোবাইল কিনা ফেলেন। তাইলেই লেঠা চুকে যায়। কেন যে একটা সাধারন মোবাইলের লাইগা পুলাপানের মত চিল্লাবিল্লা করতাছেন বুঝিনা।"
"ভাই আমার কাছে এটা সাধারন মোবাইল না।অনেক দামি মোবাইল।"
" তাইলে চিল্লাবিল্লা করেন।"
বলেই লাইন কেটে দিল।"
আমি ফোন ধরে বসে রইলাম।
বউ বলল, "কি লাইন কেটে দিয়েছে?"
আমি হ্যা সুচক মাথা নাড়লাম।
"চোরের কাছ থেকে কি আর এত সহজে ফোন ফেরত পাওয়া যায়? তবে ধৈর্য হারালে চলবে না। চেষ্টা করতে দোষ কী? " বউ বলল।
.
দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর শোয়েছিলাম।
রুনা হটাত ফিসফিস গলায় বলল, "ধরো ধরো রিং হচ্ছে।"
ফোন ধরতেই বলললাম, "ভাই ফোনটা আমার খুব দরকার..অনেক সখের ফোন.."
"আচ্ছা আপনেরে একটা কথা জিগাই--ফোন চুরি হওয়ার পর কেউ কোনদিন ফোন ফেরত পাইছে জিন্দিগিতে এমন কাহিনী হুনছেন?" ওপাশ থেকে বলল।
"হ ভাই শুনছি। আমার বন্ধু রফিকের মোবাইল চুরি হইছিল। তিনদিন পর ফেরত পাইছে।"
"আপনার কথা যদি হাচা হইয়া থাকে তাইলে হে চোর আছিলনা, হে ছিল ফেরেশতা। আমি ভাই ফেরেস্তা না। আমি খাটি চোর। আমার চৌদ্দগুষ্টি চোর। চুরি করাই আমার পেশা। লগে ইয়াবা,গাজা,ফেন্সি সব খাই। এলা বুঝতে পারছেন আমি কিমুন মানুষ?
"না ভাই আমার মনে হইতাছে আপনি অনেক ভাল মনের মানুষ।"
"ধুর মিয়া ..।" আবার লাইন কেটে দিল।
.
তারপর মোবাইল কখনো অফ কখনো অন। রিং দিলে সাথে সাথে অফ করে দেয়। মনে মনে ভাবছিলাম পুলিশকে জানালে কিছু হবে কীনা! পরে ভাবলাম,বড় বড় বিষয়ে এদেশের পুলিশ কোন কূলকিনারা করতে পারেনা আর চুরি যাওয়া মোবাইল নিয়ে কি করবে!
আর তখনি হটাত বিছানায় রুনার মোবাইল বেজে উঠল। ভাল করে তাকাতে দেখি আমার নাম্বার থেকে আসা ফোন।
ফোন ধরতেই বলল, "চিনতে পারছেন? আমি আপনার হেই মোবাইল চোর।"
"জী.. জী..ভাই চিনতে পারছি।"
"ভাল আছেন?"
"নারে ভাই ফোনের শোকে একদম পাথর হয়ে গেছি। ঘুম নাই। খাওয়া -দাওয়া নাই। বড় উদাস হয়ে গেছি।"
"আপনেত হালায় আসলেই একটা কুঞ্জুস। এমন কুঞ্জুস আমার জীবনেও দেহি নাই। জাওগ্গা যেইটার লাইগা আপনারে ফোন দিছি-- হাচা কইরা কনতো আপনি মোবাইলটা কত দিয়া কিনছিলেন?"
"একুশ হাজার টাকা । কেন ভাই?"
"না মানে হইছে কি চোরাই মার্কেটের তিন পার্টি আইছে। দামও কইতাছে। কিন্তু কত হইলে বিক্রি করমু বুঝতে পারতেছি না। তাই আসল দামটা জাইনা নিলাম ।"
"ভাই ভাই মোবাইলটা আপনি অন্য কারো কাছে বিক্রি কইরেন না। আমি আপনেরে আরো দুই তিন হাজার টাকা বাড়াইয়া দিমু।"
"মাত্র দুই-তিন হাজার ? আপনেত হালায় আসলেই খাডাইস।"
"না মানে এটাত এখন সেকেন্ড হ্যান্ড মোবাইল , তাইনা?"
"ঐ মিয়া আপনে না হেইদিন কইলেন মাত্র এক সপ্তাহ আগে কিনছেন? এক সপ্তাহে পুরা সেকেন্ড হ্যান্ড হইয়া গেল?"
"না মানে এইটাত এখন চোরাই মাল। তাইনা?"
ধমকে উঠে বলল, "আরে মিয়া চুরাই মালতো আমার কাছে। আপনের কাছে তো আর চোরাই মাল না।"
"ঠিক আছে ভাই আরো দু'এক হাজার বাড়িয়ে দিব।"
"ধুর মিয়া আপনে একটা ফাউল।" বলে লাইন কেটে দিল।
.
.
পরে কয়েকদিন ফোন দিলেই দেখি সুইচড অফ।মোবাইল ফিরে পাওয়ার আশা প্রায় ছেড়েই দিলাম।
পরদিন মাঝরাতে হটাত আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। ঘড়িতে দেখি রাত দুটো সাতাশ। কি মনে করে একবার আমার আননোন নাম্বার থেকে ফোন দিলাম। দেখি রিং বাজছে।
"কোন হালার পুতেরে এত রাত্রে ফোন দিছে?"
"ভাই আমি.. আমি.. ভাই আমার মোবাইলটা.."
"হালায় জীবনে আমি অনেক ছোটলোক দেখছি কিন্তু মোবাইলের জন্য কেউ রাত তিনটায় ফোন দে এমন ছোটলোক জীবনেও দেহি নাই। ঐ মিয়া সামান্য একটা মোবাইলের জন্য বার বার ফোন দিতে লজ্জা করেনা আপনার? যান আপনেরে আজকে থেকে ব্লক মারলাম।" বলেই লাইন কেটে দিল।
হতভম্ব আমি নির্বাক হয়ে বসে রইলাম। পাশে প্রচন্ড ভেপুর শব্দে বউ নাক ডেকে ঘুমুচ্ছে।আমার খুব অসহ্য লাগছে। ইচ্ছে হয় একবার ওর নাক চেপে ধরি..
~মেহেরাব মাশুক
Post a Comment
কমেন্টে স্প্যাম লিংক দেওয়া থেকে বিরত থাকুন